BUSINESS NEWS
রেমিট্যান্স প্রেরণে শীর্ষে আরব আমিরাত
মঙ্গলবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৪ ২৩:৩৮ অপরাহ্ন
BUSINESS NEWS

BUSINESS NEWS

গত ডিসেম্বরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলার রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন। এই অঙ্ক ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আগের বছরের ডিসেম্বরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি। এই সময় রেমিট্যান্সের চার ভাগের প্রায় এক ভাগই এসেছে আরব উপদ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত সাতটি স্বাধীন রাজ্যের ফেডারেশন-সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। বরাবর সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় আসত সৌদি আরব থেকে। ডিসেম্বরে সেই সৌদির চেয়েও প্রায় তিন গুণ বেশি রেমিট্যান্স এসেছে আমিরাত থেকে।

শুধু ডিসেম্বর নয়- চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শুরু থেকেই সবাইকে অবাক করে দিয়ে রেমিট্যান্স প্রবাহে চমক দেখিয়ে চলেছে এই দেশটি। গত ছয় মাস প্রবাসী আয় প্রেরণে শীর্ষে রয়েছে আরব আমিরাত। বাংলাদেশ ব্যাংক গত বৃহস্পতিবার দেশভিত্তিক রেমিট্যান্সের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়,

ডিসেম্বর মাসে আরব আমিরাত থেকে ৪৪ কোটি ২৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। এর আগে এক মাসে এই দেশ থেকে এত বেশি রেমিট্যান্স কখনোই আসেনি। ডিসেম্বরে সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ১৬ কোটি ৫৪ লাখ ৭০ হাজার ডলার। যুক্তরাজ্য থেকে এসেছে ২৮ কোটি ৩ লাখ ৭০ হাজার ডলার। যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে ২১ কোটি ৬ লাখ ৫০ হাজার ডলার। নভেম্বর মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৩৮ কোটি ৪ লাখ ৪০ হাজার ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছিল। অক্টোবরে আসে ৩২ কোটি ৯৩ লাখ ২০ হাজার ডলার।

সেপ্টেম্বর মাসে এই দেশটি থেকে ২৫ কোটি ৭১ লাখ ৫০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছিল। আগস্টে আসে ২৩ কোটি ৮৫ লাখ ৯০ হাজার ডলার। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এসেছিল ৩৩ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধে অর্থাৎ জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে আরব আমিরাত থেকে ১৯৭ কোটি ৮৩ লাখ (১.৯৮ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। যা এই ছয় মাসের মোট রেমিট্যান্সের ১৮ দশমিক ৩২ শতাংশ।

আর এর মধ্য দিয়ে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে রেমিট্যান্স আহরণের শীর্ষে উঠে এসেছে আরব আমিরাত। জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে সৌদি আরব থেকে এসেছে ১৪২ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে ১১২ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। আর যুক্তরাজ্য থেকে এসেছে ১৩৭ কোটি ডলার। আরব আমিরাত থেকে রেমিট্যান্সের উল্লম্ফনের আভাস গত অর্থবছরেই পাওয়া গিয়েছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশটি থেকে ৩০৩ কোটি ৩৮ লাখ ৫০ হাজার (৩.০৩ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা ছিল ২০২১-২২ অর্থবছরের চেয়ে ৪৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি।

প্রথমবারের মতো আমিরাত থেকে ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসে ২০২২-২৩ অর্থবছরে। গত অর্থবছরে তিনটি দেশ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল। বাকি দুটি দেশ ছিল সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র। গত অর্থবছরের কয়েক মাসে সৌদি আরবের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও আরব আমিরাত থেকে বেশি রেমিট্যান্স এলেও বরাবরের মতোই ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে সৌদি আরব থেকে।

তবে আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ১০ শতাংশ কম ছিল; ৩৭৬ কোটি ৫২ লাখ (৩.৭৬ বিলিয়ন) ডলার এসেছিল। ২০২১-২২ অর্থবছরে এসেছিল ৪৫৪ কোটি ১৯ লাখ (৪.৫৪ বিলিয়ন) ডলার।

২০২২-২৩ অর্থবছরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে; ৩৫২ কোটি ২০ লাখ (৩.৫২ বিলিয়ন) ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২ দশমিক ৪১ শতাংশ। ৪৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির ওপর ভর করে তৃতীয় স্থানে ছিল আরব আমিরাত। যুক্তরাজ্য থেকে এসেছিল ২০৮ কোটি (২.০৮ বিলিয়ন) ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে কোনো কোনো মাসে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও বেশি প্রবাসী আয় এসেছিল আরব আমিরাত থেকে। যেমন- গত বছরের মার্চ মাসে আরব আমিরাত থেকে ৩০ কোটি ৭৬ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। ওই মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছিল ৩০ কোটি ৩৯ লাখ ডলার। আর সৌদি আরব থেকে এসেছিল ২৮ কোটি ৩ লাখ ডলার। গত বছরের প্রথম মাস জানুয়ারি এবং ২০২২ সালের মে মাসেও সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল আরব আমিরাত থেকে।

২০২৩ সালের জানুয়ারিতে আমিরাত থেকে ৩৪ কোটি ৭৫ লাখ ৪০ হাজার ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। ওই মাসে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছিল যথাক্রমে ৩০ কোটি ৮৭ লাখ ও ২৯ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। ২০২২ সালের মে মাসে আরব আমিরাত থেকে ৩৩ কোটি ৮৬ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় দেশে এসেছিল। ওই মাসে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছিল যথাক্রমে ৩২ কোটি ৯৯ লাখ ও ২৭ কোটি ৩২ লাখ ডলার।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এর আগে একক মাসের হিসাবে আমিরাত থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসে গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে। ওই মাসে দেশটি থেকে ৩৮ কোটি ৯৬ লাখ ৪০ হাজার ডলার এসেছিল। বিদায়ী ডিসেম্বরে সেই রেকর্ড ছাড়িয়ে আমিরাত থেকে ৪৪ কোটি ২৯ লাখ ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছে। আরব আমিরাত থেকে রেমিট্যান্সের এই ইতিবাচক ধারা আগামী দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে বলে আশার কথা শুনিয়েছেন জনশক্তি রপ্তানিকারক ও অর্থনীতিবিদরা।

আরব আমিরাত থেকে রেমিট্যান্স বাড়ার কারণ জানতে চাইলে জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাশার বলেন, ২০২২ সালে আমরা সাড়ে ১১ লাখ লোককে কাজের জন্য বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছিলাম। গত বছরে পাঠিয়েছি সাড়ে ১৩ লাখ। এই সংখ্যা অতীতের যেকোনো বছরের চেয়ে বেশি। এর মধ্যে ২০ শতাংশের বেশি গেছেন আরব আমিরাতে। তারই ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশটি থেকে আসা রেমিট্যান্স প্রবাহে। তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম এখন বেশ চড়া। তাই তেলনির্ভর অর্থনীতির দেশ আমিরাতের অর্থনীতিতেও চাঙাভাব বিরাজ করছে। সেখানকার শ্রমিক ভালো বেতন পাচ্ছেন। বেশি টাকা দেশে পাঠাতে পারছেন। সে কারণেই দেশটি থেকে বেশি রেমিট্যান্স আসছে।