কোনো কারখানায় ১৫ শতাংশ শ্রমিক সম্মতি দিলেই সেখানে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যাবে- এমন বিধান রেখে শ্রম আইন সংশোধন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, ১৫ শতাংশ শ্রমিক রাজি হলেই তারা একটি ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করতে পারবে। আইএলওর এ পরামর্শ মেনে নিয়ে তা আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য এই থ্রেশহোল্ড ১০ শতাংশে নিয়ে আসা, সেটি আমরা ধীরে ধীরে করব। মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রতিনিধিরা মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি এ কথা বলেন।
আইএলওর পরামর্শ কী ছিল, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, তারা যেসব পরামর্শ দিয়েছেন, তা সংশোধিত আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে থ্রেশহোল্ড (ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে শ্রমিকদের সম্মতির হার) কমিয়ে আনা। আমরা আগে এ থ্রেশহোল্ড ২০ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছিলাম। কিন্তু সেটি যে কারখানায় তিন হাজার বা তার চেয়ে বেশি শ্রমিক আছে, তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হওয়ার কথা। কিন্তু এখন সব কারখানার জন্য এই ১৫ শতাংশ থ্রেশহোল্ড রাখা হয়েছে।
বৈঠক প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, আমাদের শ্রম আইন নিয়ে কথা বলার জন্য তাদের সঙ্গে বসেছিলাম। যতক্ষণ পর্যন্ত শ্রম আইনটিকে সংশোধন করছি, যতক্ষণ পর্যন্ত এটি সম্পূর্ণ না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত অংশীজন আন্তর্জাতিক যেসব সংস্থা আছে যারা শ্রমিকদের অধিকারের কথা বলে, তাদের কথা শুনব। কারণ আমরা দেখব আমাদের দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ অনুযায়ী যে শ্রমিক অধিকার রক্ষা করা হয়, তার সঙ্গে অংশীজনদের পরামর্শের কোনো পার্থক্য আছে কিনা।
আনিসুল হক বলেন, আমরা কোনো মৌলিক পার্থক্য খুঁজে পাইনি। কিন্তু আমরা এ অধিকার যাতে রক্ষা হয়, সে চেষ্টা সবসময় করব। শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা ও সুরক্ষার জন্য যার যার কথা শোনার, সেটি আমরা শুনব। তারা সেটি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কারিগরি কমিটিতে তুলে ধরবেন। আগামী ১২ মে আইনটি সম্পূর্ণ করার জন্য একটি সভার আয়োজন করব।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের শ্রম আইন সংশোধন করেছি। এটি গত পার্লামেন্টে সংশোধনের পর রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়েছিল। আইনটিতে কিছ ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকায় পরে ফেরত আনা হয়। আইনটি যখন প্রণয়ন করা হয়, তখন সারা বিশ্বে সর্বোচ্চ চর্চা হওয়া আইনের ধারা এখানে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেছি। এ চেষ্টায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার অবদান আছে।
তিনি আরো বলেন, পাশাপাশি ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার পরিচালনা পর্ষদে বাংলাদেশের শ্রমিক অধিকার নিয়ে কিছু দেশ নালিশ করেছিল। সে নালিশের পর আমরা বহুবার আইএলওর পরিচালনা পর্ষদকে বলেছি যে শ্রমিকদের অধিকার আমাদের দেশে কেবল রক্ষাই হয়নি, শ্রমিকদের অধিকার আরো সুদৃঢ় হয়েছে। সে পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের বিরুদ্ধে অহেতুক যে নালিশ করা হয়েছে, সেটি শেষ হওয়া উচিত।