এবিবি ও বাফেদার নির্ধারিত দরে ডলার কেনাবেচা করছে না কিছু ব্যাংক। এই দুই সংগঠনের ঘোষিত দরের সঙ্গে ব্যাংকগুলোর বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিলকৃত প্রতিবেদনে অসংগতিও পাওয়া গেছে। তাই দুই সংগঠনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে ফের তদন্তে নেমেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন বিভাগ ও বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ যৌথভাবে ব্যাংকগুলোয় তদন্তে যাবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, ব্যাংকগুলোর রেমিট্যান্স কেনার ক্ষেত্রে ১১৬ টাকা দেয়ার সুযোগ আছে। অনেক ব্যাংক ডলারের চাহিদা থাকার কারণে এ দরেই কিনছে। তবে বিক্রির ক্ষেত্রে তারা ১১১ টাকার নির্ধারিত দর না মেনে বেশি দরে বিক্রি করছে। আবার এবিবি ও বাফেদার ঘোষিত দরের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে ব্যাংকগুলোর রিপোর্ট করার কথা। কিন্তু সে অনুযায়ীও কিছু ব্যাংক রিপোর্ট করছে না। এক্ষেত্রে অসংগতি দেখা দিয়েছে। তাই এ তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলেন, দেশে ডলারের চাহিদা অনুযায়ী জোগান না থাকায় অর্থনীতির মৌলিক চাহিদা-জোগান বিধি অনুযায়ী বাজারভিত্তিক ডলার-টাকা রেটের পরিবর্তে বাফেদা ও এবিবি-নির্ধারিত দামে ডলার কেনাবেচা করার বাধ্যবাধকতা ডলারের তারল্য সংকটকে আরও দীর্ঘায়িত করবে। তাই যতই বেঁধে দেয়া হোক, যার ডলার প্রয়োজন সে মার্কেট থেকে বেশি দরে কিনবেই। তাই আগে চাহিদা অনুযায়ী ডলারের জোগান বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে। আর ডলার সংকটে বারবার ব্যাংকগুলোকে তদন্ত করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। বিদেশি উৎস থেকে ডলার পাওয়া আরও কঠিন হয়ে যাবে।
জানা যায়, গত ২২ অক্টোবর এবিবি ও বাফেদার অনুষ্ঠিত সভায় সিদ্ধান্ত হয় ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ৫০ পয়সায় রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের ডলার কিনবে। তবে সরকারের ঘোষিত আড়াই শতাংশের সঙ্গে আরও আড়াই শতাংশ বাড়তি প্রণোদনা দিতে পারবে ব্যাংকগুলো। ২৩ অক্টোবর থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ায় আট দিনের মাথায় তা পরিবর্তন করা হয়। ৩১ অক্টোবর আবার এবিবি-বাফেদার মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয় ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স আয়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা দেয়ার সীমা তুলে নিয়ে ইচ্ছামতো প্রণোদনা দিয়ে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করতে পারবে। তবে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে গিয়ে তৈরি হয়েছে বিশৃঙ্খলা। ইচ্ছামতো প্রণোদনা দিয়ে কিছু ব্যাংক ১২২-১২৪ টাকা দামে প্রবাসী আয় কিনছে। যেসব ব্যাংকের আমদানি দায় মেটানোর চাপ আছে, তারা এই দামে ডলার কিনে দায় মেটাচ্ছে। এতে ডলারের দাম এক ধাক্কায় ১২-১৩ টাকা বেড়ে যায়। আবার কিছু ব্যাংক বাড়তি কোনো প্রণোদনাই দেয়নি রেমিট্যান্সে।
বাড়তি দামে ব্যাংকগুলোর ডলার কেনার খবর গণমাধ্যামে প্রকাশ হওয়ার পর গত ৮ নভেম্বর জরুরি সভা ডাকে বাফেদা ও এবিবি। সেখানে ৩১ অক্টোবরের সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে পালন করার তাগিদ দেয়া হয়। আর প্রবাসী আয়ে ব্যাংকের নিজস্ব ও সরকারের প্রণোদনাসহ ডলারের দর কোনোভাবেই ১১৬ টাকার বেশি দেয়া যাবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়।
এরপর ৯ নভেম্বর এই দুই সংগঠনের ২১ প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সভায় ব্যাংকগুলো এবিবি ও বাফেদার নির্ধারতি দামে ডলার কেনাবেচা করতে গভর্নর নির্দেশনা দেন। যদি কেউ নির্ধারিত রেট না মেনে কেনাবেচা করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, এবিবি ও বাফেদার গৃহীত সিদ্ধান্ত অনেকে মানছে না। তাই ডলার বাজারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। এখন থেকে দুই সংগঠনের নির্ধারিত রেট যাতে সবাই বাস্তবায়ন করে, সেজন্য সাহায্য চাইতে এসেছিলেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে বলা হয়।
তিনি বলেন, নির্দেশনার বাইরে কোনো ব্যাংক অথবা এক্সচেঞ্জ হাউস ডলার কেনাবেচা করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিষয়টি আগের চেয়ে শক্তভাবে তদারকি করা হবে এখন। তাই প্রয়োজন হলে সর্বোচ্চ আড়াই শতাংশ অতিরিক্ত প্রণোদনা দিয়ে ডলার সংগ্রহ করা যাবে, কিন্তু এর বেশি নয়। যদি কেউ বেশি দামে ডলার কিনেও থাকে তাহলে ১১১ টাকাতেই বিক্রি করতে হবে। অন্যথায় আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।