অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সর্বজনীন পেনশন তহবিলের অর্থ বিনিয়োগের বিষয়ে একটি বিধিমালা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। খসড়া বিধিমালাটির নাম দেওয়া হয়েছে সর্বজনীন পেনশন তহবিল (বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা) বিধিমালা সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর পর চার মাস হয়ে গেল। যদিও সাড়া কম, তারপরও এ স্কিমে অংশ নিচ্ছেন মানুষ। টাকা জমছে সরকারের হাতে, তা বিনিয়োগও করা হচ্ছে। তবে সাড়া বেশি পাওয়া গেলে এবং জমা টাকার অঙ্ক অনেক বেড়ে গেলে তখন সরকার কী করবে? কোথায় বিনিয়োগ করবে এত টাকা? আবার এই বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে কি না, সম্প্রতি এসব প্রশ্ন সরকারের সামনে এসেছে।
বিধিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, সর্বজনীন পেনশন তহবিল ব্যবস্থাপনা কমিটি, বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা কমিটি ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিটি নামে তিনটি কমিটি গঠন করা হবে। আট সদস্যের প্রথম দুই কমিটিই মূলত বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেবে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে পরিচালনা পর্ষদ। খসড়ায় বলা হয়েছে, তহবিলের অর্থ কম ঝুঁকিপূর্ণ ও অধিক লাভজনক পোর্টফোলিওতে বিনিয়োগ করতে হবে। এর মধ্যে শেয়ারবাজার বা পুঁজিবাজারের নামও রয়েছে। এ ছাড়া আছে বাণিজ্যিক দোকান বা এমন কোনো স্থাবর সম্পত্তি, যা থেকে নিয়মিত আয় আসার সুযোগ রয়েছে।
তহবিল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হবেন জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য (তহবিল ব্যবস্থাপনা)। কমিটিতে অর্থ বিভাগের একজন যুগ্ম সচিব; বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পরিচালক পদের নিচে নন এমন পদমর্যাদার কোনো কর্মকর্তা; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান, এফবিসিসিআইয়ের একজন সদস্য এবং পেনশন কর্তৃপক্ষের মহাব্যবস্থাপক পর্যায়ের দুজন কর্মকর্তা থাকবেন।
বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হবেন পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য (বিনিয়োগ)। এতে চার্টার্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালিস্ট (সিএফএ) সোসাইটি অব বাংলাদেশের একজন প্রতিনিধি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যানকে রাখা হবে। বাকিরা তহবিল ব্যবস্থাপনা কমিটির মতোই সদস্য থাকবেন।
বলা হয়েছে, দুই-তৃতীয়াংশের উপস্থিতি হবে কমিটি বৈঠকের কোরাম। বছরে চারবার কমিটির বৈঠক হতে হবে। তবে জরুরি প্রয়োজনে এ সংখ্যা বাড়তেও পারে। পেনশন কর্তৃপক্ষের কাছে ত্রৈমাসিক ও বার্ষিক প্রতিবেদন দাখিল করবে কমিটি। খসড়া বিধিমালা অনুযায়ী, তহবিলের বিপরীতে অর্জিত সম্পদ ও বিনিয়োগের পরিমাণ উল্লেখ করে বিনিয়োগ কমিটি কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করবে। কম ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ছয়টি খাত চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রথমেই উল্লেখ করা হয়েছে দীর্ঘমেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের নাম। এরপর রয়েছে সুকুক বা এ ধরনের সরকারি সিকিউরিটিজ।
বলা হয়েছে, দীর্ঘ মেয়াদে এএ এবং স্বল্প মেয়াদে এসটি-ওয়ান মান পেয়েছে এমন কোনো তফসিলি ব্যাংকে স্থায়ী আমানতও রাখা যাবে। তবে এ মানের মূল্যায়ন হতে হবে বাংলাদেশে অনুমোদিত কোনো রেটিং সংস্থা বা স্বীকৃত কোনো আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থার মাধ্যমে। বিএসইসি অনুমোদিত বা নিয়ন্ত্রিত মিউচুয়াল ফান্ড ও স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত এ ক্যাটাগরির শেয়ার, বন্ড বা সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করার কথাও বলা হয়েছে।
সিটি করপোরেশন বা পৌরসভায় নিষ্কণ্টক স্থাবর সম্পত্তি, যা থেকে প্রতিবছর নির্দিষ্ট পরিমাণ আয় আসতে পারে বা আবাসিক বা বাণিজ্যিক দোকান, যা থেকে নিয়মিত ভাড়া আসতে পারে এমন সম্পত্তিতেও বিনিয়োগ করা যেতে পারে। খসড়ায় বলা হয়েছে, একক কোনো খাতে পেনশন তহবিলের ২০ শতাংশের বেশি অর্থ বিনিয়োগ করা যাবে না। তবে সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তা মানা হবে না।
তহবিলের কোনো অর্থ ব্যক্তিমালিকানাধীন কোনো প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা হবে না। তহবিলের কোনো অর্থ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনোভাবেই দেশের বাইরে বিনিয়োগ করা হবে না। পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা গতকাল শনিবার বলেন, সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে নিয়ে মতবিনিময় হয়েছে এবং বিধিমালাটি চূড়ান্ত হওয়ার পথে রয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিং শেষে অর্থ বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করবে। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করার বাস্তবতা কতটুকু আছে এমন প্রশ্নের জবাবে গোলাম মোস্তফা বলেন, তহবিলের পুরো অর্থ এক জায়গায় বিনিয়োগ করা হবে না। বিনিয়োগ বহুমুখীকরণের অংশ হিসেবেই শেয়ারবাজারকে ভাবা হয়েছে।