মার্কিন খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্ট চীন থেকে পণ্য আমদানি কমিয়ে ভারত থেকে আমদানি বাড়িয়েছে। ব্যয় হ্রাস ও সরবরাহ ব্যবস্থার বৈচিত্র্য বৃদ্ধিতে তারা এই পরিবর্তন ঘটিয়েছে। বিভিন্ন নথিপত্র বিশ্লেষণ করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাসে ওয়ালমার্ট মোট আমদানির ২৫ শতাংশ করেছে ভারত থেকে, ২০১৮ সালের একই সময়ে যা ছিল মাত্র ২ শতাংশ। এ সময়ে চীন থেকে তারা আমদানি করেছে ৬০ শতাংশ; ২০১৮ সালে যা ছিল ৮০ শতাংশ। অর্থাৎ চীনের ওপর ওয়ালমার্টের নির্ভরশীলতা কমলেও চীন এখনো ওয়ালমার্টের আমদানির সবচেয়ে বড় উৎস।
এ ঘটনা থেকে বোঝা যায়, চীন থেকে পণ্য আমদানির ব্যয় বেড়ে যাওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যের ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে একধরনের পালাবদল ঘটছে। অর্থাৎ সে দেশের বড় কোম্পানিগুলো এখন ভারত, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের মতো বড় দেশগুলো থেকে আমদানি বৃদ্ধি করেছে। এ বিষয়ে ওয়ালমার্টের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট আন্দ্রিয়া অলব্রাইট বলেন, আমরা সবচেয়ে কম দামে পণ্য আমদানি করতে চাই। এর অর্থ হলো, আমরা সরবরাহ ব্যবস্থার স্থিতিস্থাপকতা চাই; পৃথিবীতে হারিকেন, ভূমিকম্প থেকে শুরু করে কাঁচামালের স্বল্পতা এমন অনেক ঘটনার সম্মুখীন হতে হয় আমাদের, সে কারণে একটি দেশ বা ভৌগোলিক অঞ্চলের ওপর নির্ভরশীল থাকলে চলবে না।
ওয়ালমার্ট উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে চায় বলে জানিয়েছেন অলব্রাইট; সে ক্ষেত্রে ভারত তাদের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। ২০১৮ সাল থেকে ভারতে নিজেদের অংশীদারি বৃদ্ধি করছে ওয়ালমার্ট। সে বছর তারা ভারতের বৃহৎ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ফ্লিপকার্টের ৭৭ শতাংশ অংশীদারি কিনে নেয়। ২০২০ সালে তারা ২০২৭ সালের মধ্যে ভারত থেকে প্রতিবছর ১০ বিলিয়ন বা ১ হাজার কোটি ডলারের পণ্য আমদানির অঙ্গীকার করে, যদিও সেই লক্ষ্যমাত্রা তারা এখনো অর্জন করতে পারেনি। এখন তারা প্রতিবছর ভারত থেকে ৩০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করছে।
অলব্রাইট রয়টার্সকে বলেন, ওয়ালমার্ট ভারত থেকে এখন খেলনা, ইলেকট্রনিক পণ্যসামগ্রী, বাইসাইকেল থেকে শুরু করে ওষুধ আমদানি করছে। প্যাকেটজাত খাদ্য, শুষ্ক শস্য ও পাস্তার মতো জনপ্রিয় উপকরণও তারা আমদানি করে থাকে। ভারতের স্টক মার্কেট সম্প্রতি রেকর্ড উচ্চতায় উঠেছে। ধারণা করা হচ্ছে, স্বল্প মূল্যের পণ্য উৎপাদন, সরবরাহ ও বৃহৎ পরিসরে উৎপাদনের ক্ষেত্রে তারা চীনের বিকল্প হতে পারে। অলব্রাইট বলেন, ভারতের ক্রমবর্ধমান শ্রমশক্তি ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কারণে ওয়ালমার্ট দেশটির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। জনসংখ্যার দিক থেকে ভারত বিশ্বের শীর্ষে, যদিও গত বছর চীনের জনসংখ্যা ছয় দশকের মধ্যে এই প্রথম কমেছে।
ওয়ালমার্ট ২০০২ সালে ভারতের বেঙ্গালুরু থেকে পণ্য নেওয়া শুরু করে। এখন ভারতে ওয়ালমার্টের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এক লাখের বেশি মানুষ কাজ করেন। ওয়ালমার্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডৌগ ম্যাকমিলান চলতি বছরের মে মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, যে বৈঠককে নরেন্দ্র মোদি ফলপ্রসূ হিসেবে আখ্যা দেন। সেই বৈঠকের পর নরেন্দ্র মোদি গত ১৪ মে তৎকালীন টুইটারে লেখেন, ভারত বিশ্বে বিনিয়োগের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে গড়ে উঠছে দেখে আনন্দ লাগছে। ম্যাকমিলন লেখেন, ওয়ালমার্ট ভারতের উৎপাদন প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করার পাশাপাশি সুযোগ তৈরিতে কাজ করবে। কোভিড-১৯ মহামারির সময় বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকট হয়ে ওঠে। তখন দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র সীমিত কয়েকটি বাজারের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। সে কারণে কৌশলের পরিবর্তন হচ্ছে; ওয়ালমার্ট এখন বিভিন্ন উৎস থেকে পণ্য সংগ্রহে জোর দিচ্ছে। ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকেও পণ্য নিচ্ছে ওয়ালমার্ট, পাকিস্তান থেকে গৃহসামগ্রী ও বাংলাদেশ থেকে পোশাক নিচ্ছে তারা। এ ঘটনায় ভারতের উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন উদ্যমে কাজ করছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান। ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্বাভাস চলতি বছর দেশটির প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ আর চীনের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ শতাংশ।
রয়টার্স