
আর্থিক বহিঃপ্রবাহের কারণে ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশের টাকার অবমূল্যায়ন অব্যাহত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা বাংলাদেশ ব্যাংকের। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত তাদের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে এ মূল্যায়ন তুলে ধরেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর শেষে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার ছিল ১১০ টাকা ৫০ পয়সা, যা ২০২২ সালের একই সময়ের চেয়ে ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি। ২০২১ সালের তুলনায় তা ২২ দশমিক ৮৯ শতাংশ বেশি। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার ছিল ৮৫ দশমিক ২০ পয়সা। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামীতে বিনিময় হার স্থিতিশীল করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রপ্তানি উৎসাহিত করা, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি, বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ এবং বাণিজ্য ভারসাম্যের উন্নতি করা। আগামী মাসগুলোয় এর প্রতিফলন দেখা যাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাজারে চাহিদা-সরবরাহের ব্যবধান কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৩ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে রিজার্ভ থেকে, যার কারণে রিজার্ভ পতন অব্যাহত রয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ছিল, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে কমে ২৬ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
বিপিএম-৬ অনুযায়ী, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের শেষে আনুষ্ঠানিক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২১ দশমিক ১ বিলিয়ন ছিল, যা ২০২২ সালের একই সময়ে ছিল ২৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। গত ১৭ ডিসেম্বরে ২০ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে রিজার্ভ।
চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে আর্থিক হিসেবে ৩ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি তৈরি হয়েছে, যা গত দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, আমদানি হ্রাসের কারণে বাণিজ্য ঘাটতি আগের তুলনায় কমেছে। ফলে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত ধারায় ফিরছে। তবে আর্থিক হিসাবে এখনও বড় ঘাটতি রয়েছে। মূলত বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ ও নতুন ঋণ না পাওয়া এবং বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়ার কারণে এমন হয়েছে। এছাড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক বাজারে জ্বালানি ও খাদ্যের ঊর্ধ্বমুখী মূল্য নতুন করে ঝুঁকি তৈরি করছে। এতে সরকারের টাইট মুদ্রানীতির কারণে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও বৈশ্বিক অর্থনীতির কারণে প্রবৃদ্ধি কমে যাবে।
প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন নামমাত্র কার্যকরী বিনিময় হার (এনইইআর) এবং প্রকৃত কার্যকর বিনিময় হার (আরইইআর) উভয় সূচকেই প্রতিফলিত হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যথাক্রমে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ৫ দশমিক ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটে বিভিন্ন দেশে ডলারের বিপরীতে মুদ্রার অবমূল্যায়ন হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ফিলিপাইন ছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বী/সমকক্ষ দেশগুলোর মধ্যে এ হার সবচেয়ে বেশি ছিল বাংলাদেশে। তিন ডলারের বিপরীতে ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ টাকার অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।
এ তিন মাসে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী/সমকক্ষ দেশগুলোর মধ্যে ভারত, চীন, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ায়ও মুদ্রার অবমূল্যায়ন হয়েছে। তবে তা ছিল এক থেকে চার শতাংশের মধ্যে। সে তুলনায় বাংলাদেশি মুদ্রা তথা টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে অনেক বেশি।