ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ২৫-৩০ শতাংশে পৌঁছে যাবে : আহসান এইচ মনসুরসাপ্তাহিক দর বৃদ্ধির শীর্ষে খান ব্রাদার্সদুই বিলিয়ন ডলারের নতুন সহায়তার প্রতিশ্রুতি বিশ্বব্যাংকের শেয়ারবাজারে দর পতনে বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ বাংলাদেশের শিল্প খাতের উন্নয়নে বিনিয়োগে আগ্রহী কাতার : শিল্পমন্ত্রী
No icon

পাকিস্তানি ব্যাংক আলফালাহ কিনে নিচ্ছে ব্যাংক এশিয়া

পাকিস্তানভিত্তিক ব্যাংক আলফালাহর বাংলাদেশের কার্যক্রম অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে স্থানীয় ব্যাংক এশিয়া। ব্যাংক আলফালাহর নিরীক্ষা ও মূল্য নির্ধারণের কাজটি করছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক বহুজাতিক কর, নিরীক্ষা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রাইসওয়াটারহাউজকুপারস (পিডব্লিউসি) বাংলাদেশ। ব্যাংক আলফালাহকে অধিগ্রহণের প্রাথমিকভাবে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। এই অর্থ কয়েক ধাপে পাকিস্তানে পাঠাবে ব্যাংক এশিয়া। চলতি বছরেই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে বলে আশা করছেন ব্যাংক এশিয়ার কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে শুধু ব্যাংক এশিয়ারই এভাবে ব্যাংক অধিগ্রহণের অভিজ্ঞতা আছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ নিয়ে তারা তৃতীয়বারের মতো কোনো বিদেশি ব্যাংকের বাংলাদেশ কার্যক্রম অধিগ্রহণ করতে চলেছে। এর আগে ২০০১ সালে ব্যাংক এশিয়া কানাডাভিত্তিক নোভা স্কোশিয়া ও একই বছর পাকিস্তানের আরেক ব্যাংক মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংকের বাংলাদেশ কার্যক্রম অধিগ্রহণ করে। ফলে ব্যাংক অধিগ্রহণ তাদের কাছে নতুন কিছু না। 

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, অধিগ্রহণ বিষয়ে গত মাসে ব্যাংক এশিয়া ও ব্যাংক আলফালাহ সমঝোতা স্মারক সই করেছে। এ অনুষ্ঠানে ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সোহেল আর কে হুসেইন ও অতিরিক্ত এমডি এ এন এম মাহফুজ উপস্থিত ছিলেন। সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, আলফালাহকে অধিগ্রহণের অর্থ কয়েক ধাপে পরিশোধ করবে ব্যাংক এশিয়া। তারা প্রথম ধাপে একটা অংশ দেওয়ার এক বছর পর আরেকটি অংশ দেবে। এভাবে বাকি অর্থ দেবে পরে। তবে ব্যাংক আলফালাহর দেওয়া কোনো ঋণ এক বছরের মধ্যে খারাপ হয়ে পড়লে তাদের পাওনা অর্থের পরিমাণ কমে আসবে। ফলে এই অধিগ্রহণে ব্যাংক এশিয়ার ঝুঁকি কম বলে মনে করছেন এর কর্মকর্তারা।

জানা যায়, গত বছর থেকে ব্যাংক আলফালাহ তাদের বাংলাদেশের কার্যক্রম বিক্রির উদ্দেশ্যে উপযুক্ত ক্রেতা খুঁজছিল। এ জন্য তারা অবশ্য কোনো টেন্ডার আহ্বান করেনি। ব্যাংক এশিয়ার সঙ্গে এ নিয়ে নানা পর্যায়ে আলোচন হয়েছে। বনিবনা হওয়ায় গত এপ্রিলে ব্যাংক আলফালাহ পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জে প্রকাশিত বার্তায় তাদের বাংলাদেশ কার্যক্রম ব্যাংক এশিয়ার কাছে বিক্রির ঘোষণা দেয়। এরপর দুই দেশের সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো এতে সায় দেয়। ব্যাংক এশিয়ার প্রস্তাবের আলোকে পিডব্লিউসি বাংলাদেশকে দিয়ে পুরো কার্যক্রম সম্পন্ন করার অনুমতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

এদেশে ব্যাংকটি খুচরা, করপোরেট ও ইসলামি ব্যাংকিং সেবা দিয়ে থাকে এবং শাখা আছে ৭টি। শাখাগুলো রয়েছে ঢাকার গুলশান, মতিঝিল, ধানমন্ডি, উত্তরা ও মিরপুর এবং চট্টগ্রাম ও সিলেটে। অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে ব্যাংক আলফালাহর আমানত, ঋণ ও সব শাখার কার্যক্রম ব্যাংক এশিয়ার হয়ে যাবে। তবে একই স্থানে ব্যাংক এশিয়া ও আলফালাহর শাখা থাকলে একটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে। ব্যাংক আলফালাহর গ্রাহকেরা ব্যাংক এশিয়া থেকে সব সেবা নিতে পারবেন।

ব্যাংক আলফালাহর আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের শেষে তাদের পরিশোধিত মূলধন ছিল ৫০৫ কোটি টাকা, যার পুরোটাই বিদেশ থেকে এসেছে। সব মিলিয়ে মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬০৭ কোটি টাকা। ব্যাংকটির আমানতের পরিমাণ ২ হাজার ২১৮ কোটি টাকা। তহবিল খরচ ৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। ব্যাংকটির দেওয়া ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের হার ১ দশমিক ৮৬ শতাংশ। গত বছরে এই ব্যাংক নিট মুনাফা করেছে ৪৩ কোটি টাকা। ব্যাংকটি ২০১৫ সালে লোগো পাল্টে ও শাখার সাজসজ্জা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশের গ্রাহকদের সামনে নতুন রূপে হাজির হয়। 

ব্যাংক আলফালাহ পাকিস্তানে ১৯৯৭ সালে কার্যক্রম শুরু করে। এর মালিকানায় রয়েছে আবুধাবি গ্রুপ। পাকিস্তানের বাইরে আফগানিস্তান, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) এটির কার্যক্রম রয়েছে। এর প্রধান কার্যালয় পাকিস্তানের করাচিতে। ২০০৫ সালে ১ কোটি ৭৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার খরচ করে শামিল ব্যাংক অব বাহরাইন ক্রয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করে ব্যাংক আলফালাহ। পাকিস্তানের বাইরে বাংলাদেশ হলো প্রথম দেশ, যেখানে সেবা সম্প্রসারণ করে ব্যাংকটি।