দেশে ইসলামি ব্যাংকিং ১৯৮০ এর দশকের গোড়ার দিকে শুরু হয়। ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এই ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে বিকশিত হতে থাকে। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ দেশের প্রথম শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক। ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ব্যাংক মুনাফা ভাগাভাগির ভিত্তিতে বিনিয়োগ অ্যাকাউন্ট (মুদারাবাহ) ও অর্থায়ন সুবিধা (মুশারাকাহ) চালু করে।
২০০০ এর দশকের গোড়ার দিকে ইসলামী ব্যাংকের সাফল্যের ফলে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক গড়ে উঠে। অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও মেঘনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল আমিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দেশের অধিকাংশ মানুষ ধর্মপ্রাণ। এমনকি যারা ধর্মীয় অনুশীলন নিয়মিত মানতে পারেন না তারাও ইসলামি নীতি মেনে চলতে চান। ইসলামি ব্যাংকগুলো মানুষের এমন দৃষ্টিভঙ্গিকে কাজে লাগাচ্ছে।'
তার মতে, ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে অনেকেই সুদমুক্ত ব্যাংকিং পছন্দ করেন। ইসলামি ব্যাংকগুলোর জনপ্রিয়তার আরেক কারণ হলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তাদের অনুকূল নীতিগত সহায়তা। এটি এই খাতকে প্রচলিত ব্যাংকগুলোর তুলনায় বেশি লাভজনক করেছে।
প্রচলিত ব্যাংকগুলোর তুলনায় ইসলামি ব্যাংকিং খাতে বিধিবদ্ধ তারল্য অনুপাত (এসএলআর) ও বিনিয়োগ-আমানত অনুপাত (আইডিআর) কম। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুসারে, প্রচলিত ব্যাংকগুলোকে তাদের আমানতের ১৩ শতাংশ এসএলআর হিসেবে রাখতে হয়। ইসলামি ব্যাংকগুলোকে রাখতে হয় মাত্র সাড়ে পাঁচ শতাংশ। একই সঙ্গে প্রচলিত ব্যাংকগুলোকে এডিআর (অ্যাডভান্স টু ডিপোজিট রেশিও) ৮৭ শতাংশ ও শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোকে ৯২ শতাংশ এডিআর বজায় রাখতে হয়। প্রচলিত ব্যাংকগুলো ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে ৮৭ টাকা ও ইসলামি ব্যাংকগুলো ৯২ টাকা ঋণ দিতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিগত সহায়তা লাভজনক হওয়ায় দেশে বেশকিছু প্রচলিত বাণিজ্যিক ব্যাংক ইসলামি ব্যাংকে পরিণত হয়েছে।যেমন—প্রচলিত বাণিজ্যিক ব্যাংক স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ২০২১ সালে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকে রূপান্তরিত হয়।
এই দুই ব্যাংকসহ দেশে ১০টি পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ব্যাংক আছে। অন্যগুলো হলো—ইসলামী ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক।
দেশজুড়ে এসব ব্যাংকের প্রায় এক হাজার ৭০০ শাখা আছে। তবে অধিকাংশ প্রচলিত ব্যাংককে ইসলামি ব্যাংকিংয়ের অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া, অনেক বাণিজ্যিক ব্যাংকের ইসলামি ব্যাংকিং শাখা আছে। ফলে তারা অনেক গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে পেরেছে, যারা আগে এসব ব্যাংকের সেবা নিতেন না। দেশে ১৫ বাণিজ্যিক ব্যাংকের ৩০ ইসলামি ব্যাংকিং শাখা আছে। এছাড়াও, ১৬ ব্যাংকের ৬২৪ ইসলামি ব্যাংকিং উইন্ডো আছে।
এছাড়াও, কিছু ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিমা প্রতিষ্ঠান ইসলামি বন্ড (সুকুক), ইসলামি ইনস্যুরেন্স (তাকাফুল) ও ইসলামি ক্ষুদ্রঋণ দিচ্ছে। 'সুকুক' ব্যবস্থা অবকাঠামো ও উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা সংগ্রহের বিকল্প হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে, 'তাকাফুল' ব্যবস্থা ব্যক্তি ও ব্যবসায়ের জন্য শরিয়াহভিত্তিক বিমা সেবা দিচ্ছে।