
বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর গত বছরের আগস্টে দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যাংকটির ডিপোজিট বেড়েছে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। ঋণ বেড়েছে ৭ হাজার কোটি টাকা। পরিচালন মুনাফা নিয়ে জানতে চাইলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, তালিকাভূক্ত হওয়ায় এ বিষয়ে কোনো তথ্য প্রদান করা যাচ্ছে না।
তবে ব্যাংকিং খাতে যখন আমানতের ক্রাইসিস তখন কিভাবে এত আমানত বাড়লো এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, আমরা মনে করি যেহেতু এটি সরকারি ব্যাংক তাই এর প্রতি গ্রাহকদের যে আস্থা তা সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থার প্রতিফলন। এই বিপুল পরিমাণ আমানত ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে ব্যাংকটি সব আর্থিক সূচকে আরো ভালো করবে বলেও মনে করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
ব্যাংকের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, মূলত সুদ ও ট্রেজারি থেকে আয় এবং আদায় বাড়ায় ব্যাংকটি অর্ধবার্ষিকিতে এই মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। মূলত সিএমএসএমই ঋণ বৃদ্ধি, রপ্তানি বাণিজ্যে জোর দেওয়া, রেমিট্যান্স আহরণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করায় ব্যাংকের এই অর্জন। তাছাড়া ব্যাংকটি আদায়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন যেখানে আদায় হয়েছে ৫৮ কোটি টাকা সেখানে ২০২৩ সালের একই সময়ে নগদ আদায় হয়েছে ৩৫০ কোটি টাকা যা ব্যাংকটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
ব্যাংকটির কর্মকর্তারা মনে করেন বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ঘোষিত ১০০ ও ১৫০ দিনের বিশেষ কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের ফলে এ সাফল্য এসেছে। সরকারি ব্যাংকগুলো নিয়ে যখন চারদিকে নানা নেতিবাচক খবর তখন রূপালী ব্যাংকের এই অর্জন ব্যাংকগুলোর প্রতি সাধারণ জনগণ ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে সক্ষম হবে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাষ্ট্র মালিকানাধীন অন্য ব্যাংকগুলোও দ্রুত তালিকাভূক্ত করা উচিত। এতে করে তারাও জবাবদিহিতার আওতায় আসবে এবং রূপালী ব্যাংকের মত ভালো করার তাগিদ অনুভব করবে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধ পথে ও ব্যাংকিং চ্যানেলে ২০২২-২৩ অর্থবছরে দুই হাজার ১৬১ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। যা এযাবৎকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আহরণ। দেশে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে―দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার। আর সদ্যোবিদায়ি জুন মাসে এসেছে ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এর আগে ২০২০ সালের জুলাইয়ে ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলারের সর্বোচ্চ প্রবাস আয় এসেছিল। আজ রবিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এসব তথ্য জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সদ্যোবিদায়ি ১ থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত প্রবাসীরা প্রায় ২০২ কোটি মার্কিন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। এর পরের কয়েক দিনে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলারে। গত বছরের জুনে প্রায় ১৮৪ কোটি ডলারের প্রবাস আয় দেশে এসেছিল। ২০২১ সালের জুনে এসেছিল ১৯৪ কোটি ডলার।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রথম দুই মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ ভালো ছিল। ওই সময় ২০০ কোটি ডলারের ওপরে রেমিট্যান্স আসে। অর্থবছরে প্রথম মাস জুলাইয়ে আসে ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার এবং আগস্টে ছিল ২০৩ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। এরপরে প্রবাস আয় আশানুরূপ আসেনি। টানা পাঁচ মাস ২০০ কোটির ঘর ছুঁতে পারেনি রেমিট্যান্স। সেপ্টেম্বর আসে ১৫৪ কোটি ডলার, অক্টোবরে ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, নভেম্বরে ১৫৯ কোটি ৫১ লাখ, ডিসেম্বরে ১৬৯ কোটি ৯৭ লাখ, জানুয়ারিতে এসেছিল ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ১৫৬ কোটি ডলার এসেছে। এরপর মার্চে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়লেও এপ্রিল ও মে মাসে হোঁচট খায়। সর্বশেষ জুনে কোরবানির ঈদের মাসে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। গত অর্থবছরের মার্চে রেমিট্যান্স আসে ২০২ কোটি ২৪ লাখ, এপ্রিলে কমে হয় ১৬৮ কোটি ৪৯ লাখ, মে মাসে আসে ১৬৯ কোটি ডলার এবং সব শেষ জুনে রেমিট্যান্স আসে ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার।