অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বড় সংকটে পড়েছে দেশের অধিকাংশ ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ধীরগতিতে ঋণ বিতরণ হলেও তা আর ফেরত আসছে না। নির্ধারিত সময় পর এগুলো খেলাপিতে পরিণত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ আমানতকারী ও বিনিয়োগকারীরা। আর ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছে এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো মন্দ ঋণের বিপরীতে প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) সংরক্ষণে ব্যর্থ হচ্ছ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হিসাবে শেয়ারবাজারের ৭টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে। যেগুলো হলো-বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টে, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স, ফিনিক্স ফাইন্যান্স ও প্রিমিয়ার লিজিং। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন এবং আর্থিক খাতের ব্যবসার ভিত্তি মজবুত না হওয়ায় এ সংকটের উৎপত্তি। প্রভিশন ঘাটতি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অশনি সংকেত। এটা প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বল আর্থিক অবস্থার চিত্র তুলে ধরে। প্রভিশন ঘাটতি বলতে বোঝায় এসব প্রতিষ্ঠানে থাকা নগদ অর্থের চেয়ে আর্থিক দায়বদ্ধতার পরিমাণ বেশি। খেলাপি ঋণ বেড়ে গেলে, আর সে অনুযায়ী আয় না বাড়লে প্রভিশন ঘাটতি দেখা দেয়। নিয়ম অনুযায়ী, নিয়মিত বা অশ্রেণিকৃত ঋণের বিপরীতে পরিচালন মুনাফার ০.৫০ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রভিশন হিসেবে রাখতে হয়। এছাড়া নিম্নমানের শ্রেণিকৃত ঋণের বিপরীতে ২০ শতাংশ এবং সন্দেহজনক শ্রেণিকৃত ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ প্রভিশন হিসেবে রাখতে হয়। তবে মন্দ বা লোকসান ক্যাটাগরির খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন হিসেবে আলাদা করে রাখতে হয় ১০০ শতাংশ অর্থ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট। আর্থিক পরিস্থিতিতে বেশ নাজুক প্রতিষ্ঠানটির অন্যদের তুলনায় আমানত সংগ্রহ এবং ঋণ আদায়েও পিছিয়ে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা। খেলাপিসহ অন্য ঋণের বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটির প্রভিশনের প্রয়োজন ছিল প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে রাখতে সক্ষম হয়েছে মাত্র ৩৫৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে প্রতিষ্ঠানটি ৬৪৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকার প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে।
এরপরেই রয়েছে জিএসপি ফাইন্যান্স। সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রভিশন ঘাটতি ৩১৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এছাড়া প্রিমিয়ার লিজিংয়ের প্রভিশন ঘাটতি ১৪৭ কোটি, ফাস্ট ফাইন্যান্সের ১৩৪ কোটি, বে লিজিংয়ের ৯৩ কোটি এবং ফিনিক্স ফাইন্যান্সের ২১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এই বিষয়ে বলেন, ব্যাংক খাতে নজরদারি করতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে ঠিকভাবে নজর দিতে পারছে না। এই সুযোগে অনেকেই এসব প্রতিষ্ঠানকে লুট করছে। এই পরিস্থিতি থেকে বেরুতে হলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নজরদারি বা পরিদর্শন বাড়াতে হবে।