বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও কমে গেছে। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) মার্চ ও এপ্রিল মাসের দায় মেটানোর পর বাংলাদেশ ব্যাংকের মোট রিজার্ভ কমে ২ হাজার ৩৭৭ কোটি ডলারর (২৩.৭৭ বিলিয়ন) নেমে এসেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ এখন ১ হাজার ৮৩২ কোটি ডলার (১৮.৩২ বিলিয়ন)। প্রকৃত বা ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ১৩ বিলিয়ন ডলারের কিছুটা কম। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে আজ এ তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, গত সপ্তাহে আকু বিল বাবদ রিজার্ভ থেকে ১৬৩ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়। এরপর রিজার্ভ কমে যায়। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া নিট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ১১ কোটি মার্কিন ডলার। এ লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আইএমএফ ১ হাজার ৪৭৫ কোটি ডলারে নামিয়েছে, যদিও এখন তা ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের কম। প্রতি মাসে দেশের আমদানি দায় মেটাতে এখন প্রায় ৫০০ কোটি ডলার প্রয়োজন হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত দুই মাসে ১৬৩ কোটি ডলার আমদানি বিল পরিশোধ করেছে। ফলে রিজার্ভ কিছুটা কমেছে। সামনের মাসে আইএমএফের ঋণের কিস্তি আসবে। এ ছাড়া জুনের মধ্যে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থছাড় হবে। প্রবাসী আয় চলতি মাসে ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করছেন তিনি; অর্থাৎ ডলারের প্রবাহ বাড়বে। এতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির চাপও কমে আসবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, চলতি মাসের প্রথম ১২ দিনে ৯০ কোটি ডলার প্রবাসী আয় এসেছে। ডলারের দাম বাড়িয়ে ১১৭ টাকা করা হয়েছে—এ বাস্তবতায় প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বাড়বে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা। এ ছাড়া ডলারের দাম বাড়ায় রপ্তানি আয় আসাও বাড়বে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন সরকারি আমদানি দায় মেটানোর জন্য প্রতি ডলার ১১৭ টাকা ৪৪ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করছে। আবার যেসব ব্যাংক বেশি দামে প্রবাসী আয় কিনছে, তাদের ডলার বাংলাদেশ ব্যাংক ১১৭ টাকা ৪৪ পয়সা দরে কিনে নিচ্ছে। এরপরও রিজার্ভের ক্ষয় ঠেকানো যাচ্ছে না। যে পরিমাণ ডলার বিক্রি করা হচ্ছে, কেনা হচ্ছে তার চেয়ে কম।
অর্থনীতিক সংকট ঠেকাতে আইএমএফের শর্ত মেনে গত সপ্তাহে ডলারের মধ্যবর্তী দাম ১১৭ টাকা নির্ধারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক; আগে যা ছিল ১১০ টাকা। এদিকে ঋণের সুদহারও বাজারভিত্তিক করা হয়েছে।
ডলার-সংকটের মধ্যে আর্থিক হিসাব ও চলতি হিসাবে ঘাটতি হওয়ায় ২০২২ সালের জুলাইয়ে আইএমএফের কাছে ঋণ চায় বাংলাদেশ। ছয় মাস পর সংস্থাটি গত বছরের ৩০ জানুয়ারি ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করে। এর তিন দিনের মাথায় ২ ফেব্রুয়ারি ঋণের প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার ও গত ডিসেম্বর মাসে দ্বিতীয় কিস্তিতে ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। ঋণের তৃতীয় কিস্তি বাবদ ১১৫ কোটি ডলার আগামী মাসে আসবে।
এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন অর্থাৎ আকু হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যকার আন্ত-আঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে এশিয়ার ৯টি দেশের মধ্যে যেসব আমদানি-রপ্তানি হয়, প্রতি দুই মাস পরপর তা নিষ্পত্তি হয়। অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের লেনদেন তাৎক্ষণিকভাবে সম্পন্ন হয়। আকুর সদস্যদেশগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভুটান ও মালদ্বীপ। দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় এই তালিকা থেকে শ্রীলঙ্কা বাদ পড়েছে।