দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আজ বুধবার বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য ও অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মো. হাফিজুর রহমানকে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন-১ শাখা থেকে এ–সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়। এতে বলা হয়, প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান ১২০ দিনের মধ্যে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করে নির্বাচিত কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবেন। আদেশে বলা হয়, এফবিসিসিআইয়ের বিদায়ী সভাপতি মাহবুবুল আলম স্বাস্থ্যগত কারণে পদত্যাগ করেন। তাঁর পদত্যাগের পর মো. আমিন হেলালী ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে নিজেকে দাবি করেন। যদিও মো. আমিন হেলালীর এই দাবির পেছনে পর্ষদ পুনর্গঠনসংক্রান্ত তথ্যপ্রমাণ দেওয়া হয়নি। সেই সঙ্গে এ–সংক্রান্ত যে পত্র বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়, তা তারিখের দিক থেকে ত্রুটিপূর্ণ ছিল।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মনে করছে, নির্বাচিত পরিচালকদের সঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের বর্তমান পর্ষদের সমন্বয়হীনতার কারণে বাণিজ্য সংগঠন আইন-২০২২–এর ১৭ (১) ধারা অনুযায়ী ‘ব্যবসা, শিল্প, বাণিজ্য, সেবা খাতের স্বার্থে’ সংগঠনটি সার্বিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। সে কারণে বাণিজ্য সংগঠন আইন-২০২২–এর ১৭ (১) ধারা অনুযায়ী বর্তমান পর্ষদ ভেঙে দেওয়া আবশ্যক। সংগঠনের সব কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সংশ্লিষ্ট আইন, সংগঠনের সংঘস্মারক ও সংঘবিধি অনুযায়ী এফবিসিসিআই পরিচালিত হওয়া আবশ্যক বলে মনে করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এই বাস্তবতায় সরকার এফবিসিসিআইয়ে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরপরই এফবিসিসিআই পর্ষদের কয়েকজন সদস্যসহ সাধারণ সদস্যদের একাংশ ফেডারেশনের নেতৃত্ব বদলে তৎপর হয়ে ওঠেন। তাঁদের সঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের বিএনপিপন্থী সাবেক নেতারাও যুক্ত হন।
এফবিসিসিআইয়ের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করে প্রশাসক নিয়োগের দাবি জানিয়ে গত মাসে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদকে চিঠি দেন আবুল কাসেম হায়দারসহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ১৫ বছরে এফবিসিসিআইয়ের কার্যক্রম ব্যবসা, শিল্প–বাণিজ্য ও সেবা খাতের স্বার্থে পরিচালিত হয়নি। বরং অনির্বাচিত ও একদলীয় স্বৈরাচারী সরকারের তোষামোদ, ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলসহ রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে তৎপর ছিল। রাজনৈতিক মদদপুষ্ট কিছু অসাধু, অব্যবসায়ী পর্ষদের নেতৃত্বে এসে এফবিসিসিআইয়ের অফিসকে দলীয় কার্যালয়ে পরিণত করেছেন। তাঁরা বিভিন্ন বাজার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করে দেশের সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছিলেন।
এফবিসিসিআইয়ের বর্তমান পর্ষদ বাতিল করে প্রশাসক নিয়োগের আবেদন নিষ্পত্তিতে গতকাল মঙ্গলবার শুনানি করে বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) নাজনীন কাউসার চৌধুরী। সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত শুনানিতে অংশ নেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি আবুল কাশেম হায়দার, সদস্য জাকির হোসেন, গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী।
এ বিষয়ে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি আবুল কাশেম হায়দার গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি পদত্যাগ করলেও তাঁর অবর্তমানে কে দায়িত্ব পালন করবেন, সেটি তিনি তাঁর পদত্যাগপত্রে পরিষ্কার করেননি। তা ছাড়া বর্তমান সহসভাপতি ও পরিচালকেরা কেউ কার্যালয়ে আসছেন না। অনেকে আত্মগোপনে আছেন। গত ৫ আগস্টের পর পর্ষদের কোনো সভা হয়নি। ফেডারেশনের কার্যক্রমে একধরনের স্থবিরতা চলে এসেছে। এমন প্রেক্ষাপটে বর্তমান পর্ষদ ভেঙে প্রশাসক নিয়োগ করা দরকার। বিষয়টি আমরা শুনানিতে জোরালোভাবে বলেছি।’
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কবে পদত্যাগ করলেন, জানতে চাইলে সাবেক সহসভাপতি আবুল কাশেম হায়দার বলেন, ‘শুনানিকালে বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগের কর্মকর্তারা আমাদের জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে সভাপতি মাহবুবুল আলম পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন।’