ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ২৫-৩০ শতাংশে পৌঁছে যাবে : আহসান এইচ মনসুরসাপ্তাহিক দর বৃদ্ধির শীর্ষে খান ব্রাদার্সদুই বিলিয়ন ডলারের নতুন সহায়তার প্রতিশ্রুতি বিশ্বব্যাংকের শেয়ারবাজারে দর পতনে বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ বাংলাদেশের শিল্প খাতের উন্নয়নে বিনিয়োগে আগ্রহী কাতার : শিল্পমন্ত্রী
No icon

আর্থিক খাতে নিয়ন্ত্রণ আরও জোরদার করার অঙ্গীকার করেছে সাইপ্রাস

তুন এক তথ্য ফাঁসের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে সাইপ্রাস সরকার। রাশিয়ার ধনকুবেরদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসছে এই খবর পাওয়ার পর রুশ ধনকুবেররা সাইপ্রাসে অর্থ সরিয়ে ফেলেছিলেন বলে ফাঁস হওয়া নথিতে জানা গেছে। এরপর সাইপ্রাস সরকার আর্থিক খাতের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরও জোরদার করার অঙ্গীকার করেছে।

এক অজানা সূত্র ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস ও জার্মানির পেপার ট্রায়াল মিডিয়ার কাছে সাইপ্রাসে রুশ ধনীদের অর্থ পাচারবিষয়ক ৩৬ লাখ ফাইল ফাঁস করেছে। সেখান থেকে দ্য গার্ডিয়ানসহ আরও কয়েকটি সংবাদমাধ্যম সেগুলো হাতে পেয়েছে। এই অর্থ পাচারের ঘটনায় সহায়তাকারী হিসেবে প্রাইস ওয়াটারহাউস কুপার্স সাইপ্রাস ও আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে এসেছে। একজন জার্মান সাংবাদিকের নামও সেখানে আছে।

সাইপ্রাস থেকে এর আগে কখনো এত আর্থিক তথ্য ফাঁস হয়নি। জানা যায়, অস্বচ্ছ অফশোর কাঠামো ব্যবহার করে হিসাববিদ ও করপোরেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো পশ্চিমা এক প্রভাবশালী সাংবাদিককে গোপনে অর্থ পেতে সহায়তা করেছে এবং নিয়ম ভঙ্গ করে ফুটবল ক্লাবে বিনিয়োগের ব্যবস্থা করেছে। আর্থিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত সাইপ্রাস নিজের মর্যাদা ধরে থাকতে বদ্ধপরিকর। তারা বলেছে, এ ধরনের কার্যক্রম কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না।

এই ফাঁস–কাণ্ডে যা জানা গেল

১. পিডব্লিউসি সাইপ্রাস ও আরও কয়েকটি উপদেষ্টা সংস্থা রাশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী ধনকুবের আলেক্সেই মোরডাশভকে এক পাবলিক কোম্পানিতে ১০০ কোটি পাউন্ড সরিয়ে নিতে সহায়তা করেছে। যেদিন তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছেন, সেদিনই এই ঘটনা ঘটেছে। দ্য গার্ডিয়ানকে বলা হয়েছে, এটি সাইপ্রাসে চলমান এক অপরাধ তদন্তের অংশ।

২. প্রভাবশালী এক জার্মান সাংবাদিক মোরডাশভের কাছ থেকে গোপনে ছয় লাখ পাউন্ড পেয়েছেন। রাশিয়া–বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত এই সাংবাদিক ভ্লাদিমির পুতিন বিষয়ক দুটি বই প্রকাশে সহায়তা করে এই অর্থ পেয়েছেন।

৩. রোমান আব্রামোভিচ যখন চেলসি ফুটবল ক্লাবের মালিক ছিলেন, তখন কোটি কোটি পাউন্ড অর্থ অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়েছে। সম্ভবত নিয়ম ভঙ্গ করে ক্লাবের এজেন্ট, স্কাউট ও কর্মকর্তাদের এই অর্থ দেওয়া হয়েছে।

৪. গোপন চুক্তির মাধ্যমে আব্রামোভিচ ও সুপার এজেন্ট হিসেবে পরিচিত পিনহাস জাহাভি ২১ জন তরুণ ফুটবলারের ক্যারিয়ার নিয়ন্ত্রণ করেছেন, যা কার্যত দাস শ্রমের সঙ্গে তুলনীয়।

প্রাইস ওয়াটারহাউস কুপার্সের মুখপাত্র এ বিষয়ে দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, আইন না মানা ও বিধিনিষেধে অমান্য করার যেকোনো অভিযোগ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। সে বিষয়ে আমরা তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নিই।

অর্থ পাচার কাণ্ডে কনসোর্টিয়ামের এক প্রশ্নের জবাবে সাইপ্রাস সরকারের একজন মুখপাত্র বলেন, যুক্তরাজ্যের কারিগরি সহায়তায় আগামী বছর নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন ইউনিট গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ নিয়ে শিগগিরই সরকারের কাছে প্রতিবেদন দেওয়া হবে, কীভাবে এসব অপরাধের তদন্ত ও বিচার করা হবে, সেখানে তা নিয়েও পরিকল্পনা দেওয়া হবে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক পরিসরে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর সংক্রান্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক উদ্যোগেও তারা যুক্ত হচ্ছে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ও সহযোগীদের ওপর নিষেধাজ্ঞার সময় ও প্রয়োগ নিয়ে সাইপ্রাস ও ইউরোপজুড়ে তদন্ত হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউক্রেনে হামলার জেরে রাশিয়ার ওপর বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও অনেক দেশে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না বলে উদ্বেগ আছে। সাইপ্রাস এমন একটি দেশ। যেসব নথিপত্র ফাঁস হয়েছে, সেগুলোর মেয়াদ ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত। দেখা যায়, প্রায় ৮০০ কোম্পানি ও ট্রাস্ট কর ফাঁকি ও গোপনীয়তার নিরাপদ জায়গা হিসেবে পরিচিত অঞ্চলে নিবন্ধিত ছিল এবং সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ ছিল রুশদের হাতে। এর মধ্যে ৬৫০-এর বেশি ছিল সাইপ্রাসের কোম্পানি ও ট্রাস্ট। সাইপ্রাসের নতুন প্রেসিডেন্ট নিকোস ক্রিস্টোডুলিস দেশটির আর্থিক খাত নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন, যদিও এই দেশ অনেক দিন ধরেই শিথিল নিয়মকানুনের জন্য পরিচিত। চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ২৩ জন সাইপ্রাসের পাসপোর্টধারী ব্যক্তি ও সাইপ্রাসে নিবন্ধিত ডজনখানেক কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে দেশটির নতুন সরকার নড়েচড়ে বসে। তখন তারা রুশ পুঁজি নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থান নেয়।