
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে ডিজিটাল অতি ক্ষুদ্রঋণ। এখন পর্যন্ত বড় পরিসরে এই ঋণের কার্যক্রম যৌথভাবে পরিচালনা করেছে বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক ও মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ।
প্রতিষ্ঠান দুটি বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে এই ধরনের অতি ক্ষুদ্রঋণের চাহিদা বাড়ছে প্রান্তিক পর্যায়ে। এ ধরনের ঋণ বিতরণে অন্যান্য ব্যাংকও যাতে এগিয়ে আসে, সে লক্ষ্যে অতি ক্ষুদ্রঋণের জন্য গঠিত পুনঃ অর্থায়ন তহবিলের আকারও বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বিকাশ জানিয়েছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে শুরু হওয়া অতি ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ কার্যক্রমের আওতায় দেড় বছরে প্রায় পৌনে ৩০০ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। গত দুই মাসে বিকাশের মাধ্যমে সিটি ব্যাংক অতি ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করেছে ১০০ কোটি টাকার মতো। ২৭৫ কোটি টাকা ঋণের ২০৩ কোটি টাকা সময়মতো পরিশোধও করেছেন ঋণগ্রহীতারা। বর্তমানে বাজারে চলমান ঋণ আছে ৭২ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে বিকাশের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা আলী আহম্মেদ বলেন, ‘জামানতবিহীন ডিজিটাল ন্যানো লোন বা অতি ক্ষুদ্রঋণ সব পেশার মানুষের জন্য দারুণ স্বস্তির। বিকাশের সব গ্রাহক ব্যাংকে না গিয়েই ব্যাংকের ঋণ পাচ্ছেন হাতের মুঠোয়। বাংলাদেশে এ উদ্যোগ এটিই প্রথম।’
বেসরকারি খাতের ঢাকা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক এবং ব্যাংক এশিয়াও অতি ক্ষুদ্রঋণ সেবা চালু করেছে। আরও বেশ কিছু ব্যাংক এই ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। নতুন করে সরকার ডিজিটাল ব্যাংক করারও উদ্যোগ নিয়েছে। সেটি চালু হলে অ্যাপনির্ভর অতি ক্ষুদ্রঋণের পরিসর আরও বাড়বে বলে ধারণা খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।
দেশে অতি ক্ষুদ্র এই ঋণের ব্যাপ্তি বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘ডিজিটাল ক্ষুদ্রঋণ’ সুবিধার জন্য গঠিত ১০০ কোটি টাকার পুনঃ অর্থায়ন তহবিলের আকার বাড়িয়ে ৫০০ কোটি টাকায় উন্নীত করেছে। গতকাল রোববার এ–সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ‘ডিজিটাল ক্ষুদ্রঋণ’ সুবিধার পুনঃ অর্থায়ন তহবিলের আকার বাড়ানো হলো।
ডিজিটাল পদ্ধতিতে অতি ক্ষুদ্রঋণ দিতে দেশের ব্যাংকগুলোকে ১ শতাংশ সুদে তহবিল থেকে পুনঃ অর্থায়ন সুবিধা দিয়ে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল অ্যাপস, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, ই-ওয়ালেট ব্যবহার করে ব্যাংক থেকে দেওয়া এ ধরনের ঋণে পুনঃ অর্থায়ন তহবিল থেকে সহায়তা দেওয়া হয়।
জানা গেছে, সাধারণ গ্রাহকদের জন্য ৫০০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অতি ক্ষুদ্রঋণ নেওয়ার সুবিধা দিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি বিবেচনায় ৫০ হাজার টাকার নিচে সর্বোচ্চ ঋণসীমা নির্ধারণ করতে পারে। ব্যাংক ও গ্রাহক উভয় পর্যায়ে ঋণের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ছয় মাস।
অ্যাপের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে নেওয়া এই ঋণের সুদ নির্ধারিত হয় প্রযুক্তির সহায়তায় দৈনিক হারে। ফলে ঋণগ্রহীতা মেয়াদ পূর্তির আগেও ঋণ শোধ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তাঁকে শুধু ঋণ নেওয়া দিনগুলোর জন্য সুদ দিতে হয়। অগ্রিম ঋণ নিষ্পত্তির জন্য দিতে হয় না বাড়তি কোনো খরচ।
২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশের সঙ্গে প্রথমবারের মতো এই ঋণ দেওয়া শুরু করে বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক। বিকাশের লেনদেন প্রতিবেদন ও ব্যবহারের ধরন দেখে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাই ঠিক করে দেয়, গ্রাহক ঋণ পাওয়ার যোগ্য কি না। বিকাশের অ্যাপে এই ঋণের জন্য আবেদন করা যায়, উপযুক্ত হলে তাৎক্ষণিকভাবে ঋণ দেয় সিটি ব্যাংক। এ জন্য কোনো নথিপত্রও লাগে না।