নিয়ম অনুযায়ী চলতি বছরের শেষে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি পুনরায় নির্ধারণ করা হবে। গত পাঁচ বছরের সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি সাপেক্ষে এবার মজুরি বৃদ্ধির অংকটা অন্য সময়ের তুলনায় বেশি হবে। এমন তথ্য জানিয়ে আমেরিকান অ্যাপেয়ারাল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনের (এএএফএ) প্রেসিডেন্টকে চিঠি দিয়েছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক মালিক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান। বৃহস্পতিবার পাঠানো ওই চিঠিতে তিনি মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে নতুন ক্রয়াদেশের ক্ষেত্রে পণ্যের দাম সমন্বয়ে অনুরোধ জানান। গতকাল এ চিঠির বিষয়ে গণমাধ্যমকে জানায় বিজিএমইএ।
চিঠিতে পোশাক শ্রমিকের মজুরির বিষয়ে ফারুক হাসান বলেন, ‘তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি পুনর্নির্ধারণের জন্য মজুরি বোর্ড কাজ করছে। এরই মধ্যে বোর্ড কয়েকটি বৈঠক করেছে। তারা কারখানা পরিদর্শনের পাশাপাশি শ্রমিক ও মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করছে। আমি বিশ্বাস করি, এ বছর শেষ হওয়ার আগেই নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা করা হবে। সর্বশেষ নিম্নতম মজুরি পর্যালোচনার প্রবণতা ও গত পাঁচ বছরের সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি সমন্বয় করলে যৌক্তিকভাবে মজুরি বাড়বে। আজকের সময়ে বিশ্বে মূল্যস্ফীতি থেকে কারোরই রেহাই নেই, তা বাংলাদেশ কিংবা অন্য যেকোনো দেশ হোক। তাছাড়া আপনি জানেন যে ২০১৩ সালের মজুরি কাঠামোতে ৫ শতাংশ বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট বাধ্যতামূলক করা হয়। ফলে প্রতি বছর শ্রমিকের মূল মজুরি ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পায়। নিম্নতম মজুরি বোর্ড একটি স্বাধীন সংস্থা, যাতে সমানসংখ্যক হারে শ্রমিক-মালিক ও নিরপেক্ষ সদস্য রয়েছেন। মজুরি বোর্ড স্বাধীনভাবে কাজ করছে। ফলে কত মজুরি বাড়বে, সেটি অনুমান করা আমার পক্ষে কঠিন।’
চিঠিতে শ্রমিকদের জীবনমান ও মূল্যস্ফীতির বিবেচনায় ক্রেতাদের প্রতি পোশাকের দাম বাড়ানোর অনুরোধ জানানো হয়। তৈরি পোশাকের কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, আমদানি খরচ বৃদ্ধি এবং কারখানার বিভিন্ন স্তরে খরচ বৃদ্ধির বিষয়ে উল্লেখ করা হয়। এতে যেসব ক্রয়াদেশের পোশাক চলতি বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে জাহাজীকরণ করতে হবে, সেসব পোশাকের দামও যৌক্তিকভাবে বাড়ানোর অনুরোধ জানান বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘পণ্য উৎপাদনকারী থেকে শুরু করে ক্রেতা সবাই এখন কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। মূল্যস্ফীতির হার অভূতপূর্ব উচ্চতায় উঠে যাওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি গ্রহণ করছে। এতে সমাজে অর্থের প্রবাহ কমে যাচ্ছে, কমছে পণ্যের চাহিদা। একদিকে খুচরা বিক্রয়ের পর্যায়ে সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে, অন্যদিকে উৎপাদকরা একেবারে “দুঃস্বপ্নের” মতো পরিস্থিতিতে পড়ে গেছেন। এতে নিজেদের সক্ষমতা, সরবরাহ, পরিকল্পনা ও পূর্বাভাস সবকিছু ব্যবস্থাপনা কঠিন হয়ে পড়েছে। এছাড়া উৎপাদন খরচ ও কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় নতুন নতুন পণ্য উদ্ভাবন, পণ্যের বৈচিত্র্য নিয়ে আসাসহ গবেষণাধর্মী কাজের ক্ষেত্রও কঠিন হয়ে উঠেছে।