ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ২৫-৩০ শতাংশে পৌঁছে যাবে : আহসান এইচ মনসুরসাপ্তাহিক দর বৃদ্ধির শীর্ষে খান ব্রাদার্সদুই বিলিয়ন ডলারের নতুন সহায়তার প্রতিশ্রুতি বিশ্বব্যাংকের শেয়ারবাজারে দর পতনে বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ বাংলাদেশের শিল্প খাতের উন্নয়নে বিনিয়োগে আগ্রহী কাতার : শিল্পমন্ত্রী
No icon

চীনের এক কনটেইনার কৃত্রিম ফুল বেহাত হলো ভাসানচরে

শিপিং কনটেইনারটির নম্বর কেওসিইউ ৫০৬৭৭৭০। এই কনটেইনারে ছিল কৃত্রিম ফুল। চীনের নিংবো বন্দরে যখন বাংলাদেশমুখী জাহাজে কনটেইনারটি তুলে দেওয়া হয়েছিল, তখনো কে জানত এই কনটেইনারটির শেষ পরিণতি হবে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলীয় এক দুর্গম চরে? এক দুর্ঘটনার পর নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছানোর আগে পথচলা থেমে গেছে কনটেইনারটির।

কনটেইনার চলাচলের স্থান-কাল এখন সহজেই বের করা যায়। কনটেইনার নম্বর ধরে ওয়েবসাইটে ঢুঁ মেরে দেখা যায়, রপ্তানিকারকের কারখানা থেকে ট্রাকে করে চীনের নিংবো বন্দরে এই কনটেইনার নেওয়া হয়েছিল ৮ জুন। সেখান থেকে ‘এমভি এইচএমএম ঢাকা’ নামে চট্টগ্রাম বন্দরমুখী একটি জাহাজে তুলে দেওয়া হয় ১৩ জুন। জাহাজটির ১ হাজার ৪৩৩ একক কনটেইনারের একটি ছিল এটি। 

ট্র্যাকিং সাইট জানাচ্ছে, নিংবো থেকে দক্ষিণ চীন সাগর, আন্দামান ও বঙ্গোপসাগর হয়ে প্রায় ৩ হাজার ৫২৬ মাইল পথ পেরিয়ে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজটি পৌঁছে ২৫ জুন। মাত্র ১১ দিনেই চীনের নিংবো থেকে জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে যায়। পরদিনই জেটিতে ভেড়ানো হয় জাহাজটি। ১ হাজার ৪৩২টি কনটেইনারের সঙ্গে জাহাজ থেকে নামানো হয় এই কনটেইনারটিও। কনটেইনারটি খালাস হবে কেরানীগঞ্জের অদূরে পানগাঁও নৌ টার্মিনালে। তাই চট্টগ্রাম বন্দরে নামানোর পর অপেক্ষা পানগাঁওগামী জাহাজের। এই অপেক্ষা শেষ হয় ৬ জুলাই। পানগাঁও এক্সপ্রেস নামের ছোট জাহাজে তুলে দেওয়া হয় কনটেইনারটি। এই কনটেইনারের সঙ্গে আরও ৭১টি কনটেইনার (২০ ফুট লম্বা হিসেবে ৯৬ একক) ছিল ওই জাহাজে।

রওনা দেওয়ার দিনই ছোট জাহাজটি বঙ্গোপসাগরের উপকূল পাড়ি দেওয়ার আগে ঢেউয়ের মুখে কাত হয়ে যায়। ঘটনাস্থল ছিল নোয়াখালীর ভাসানচরের অদূরে সাগর উপকূলীয় এলাকায়। এটা মূলত চট্টগ্রাম থেকে সারা দেশে নৌপথে পণ্য পরিবহনের রুট। জাহাজটি কাত হয়ে ডুবতে থাকে। এক দিনের মাথায় জাহাজটি পুরোপুরি ডুবে যায়। কৃত্রিম ফুল খুবই হালকা। জাহাজের ভারসাম্য রক্ষা করতে হালকা পণ্য সাধারণত জাহাজের ওপরের দিকে থাকে। ডুবে যাওয়া জাহাজের ডেকের ওপরেই ছিল কৃত্রিম ফুলের কনটেইনারটি। জাহাজটি ডুবে যাওয়ার পর কনটেইনারটি ভেসে চলে যায় ভাসানচরের পাশে একটি দুর্গম চরে। চরটি ছেঁড়াদ্বীপ নামে এখন পরিচিত।

দিনের পর দিন পড়ে থাকা কনটেইনারটি পাহারায় কোনো ব্যবস্থা ছিল না। তাতে চোখ পড়ে উপকূলীয় লোকজনের। ইস্পাতের মোটা পাতের তৈরি কনটেইনারটির দুই পাশ কেটে ফেলে তারা। এরপর ৩৬১ কার্টনে থাকা কৃত্রিম ফুল সরিয়ে নেয়। এই ফুল রাজধানী ঢাকার ‘এ হোসেন এন্টারপ্রাইজের’ জন্য রপ্তানি করেছিল চীনের ইইউ দেশাং ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট লিমিটেড।

একটি ভিডিওতে কনটেইনারটির চেহারা দেখে অবাক হয়েছেন এই কনটেইনারে পণ্যের আমদানিকারক ‘এ হোসেন এন্টারপ্রাইজের’ কর্ণধার আশরাফ হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুর্গম এলাকার চরে কনটেইনারটি কেটে দুই পাশ আলাদা করে ফেলা হয়েছে। কীভাবে সম্ভব হলো? আমার আমদানি করা ফুল বিক্রি হচ্ছে ভাসানচরে। রোহিঙ্গারা বিক্রি করছে। তিনি বলেন, প্রায় ৬০ লাখ টাকার কৃত্রিম ফুল ছিল কনটেইনারটিতে। এখন আমরা তো নিঃস্ব হয়ে গেলাম।’

ভিডিওতে দেখা যায়, কনটেইনারটি সাগর উপকূলে হাঁটুসমান পানিতে পড়ে আছে। দুই পাশ নেই। কনটেইনারের দরজার প্রথম ও শেষ প্রান্ত অক্ষত আছে। তাতে কনটেইনার নম্বরটি দেখা যাচ্ছে। রয়েছে হুন্দাই মার্চেন্ট মেরিনের লোগো। ছিন্নবিচ্ছিন্ন কনটেইনারে নম্বরটি দেখেই আমদানিকারক বুঝে গেছেন তাঁর পণ্য নেই।

কেন এমন হয়েছিল, জানতে চাইলে ভাসানচরের ওসি হুমায়ূন কবির প্রথম আলোকে বলেন, জাহাজটি দুর্ঘটনার পর কিছুসংখ্যক কনটেইনার সন্দ্বীপের উপকূল ও ভাসানচর উপকূলে ভেসে চলে যায়। ভাসানচরে একটি কনটেইনার তাদের হেফাজতেও রয়েছে। তবে ছেঁড়াদ্বীপে কনটেইনারটি কে বা কারা এভাবে কেটে ফেলল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে কনটেইনারের কিছু কৃত্রিম ফুল তাঁরা উদ্ধার করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

দুর্ঘটনার পর জাহাজটি এখনো উদ্ধার হয়নি। জাহাজটি পরিচালনাকারী সি গ্লোরি শিপিং এজেন্সিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির উদ্দিন বলেন, তাঁরা জাহাজ ভাসিয়ে তোলার চেষ্টা শুরু করেছেন। সাগর উত্তাল থাকায় কাজটি দেরি হচ্ছে। তবে আমদানিকারকেরা জানিয়েছেন, জাহাজটি উদ্ধারে কোনো পদক্ষেপ তাঁরা দেখেননি। অবহেলার কারণেই কনটেইনার কেটে পণ্য লুট করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। একাধিক ভিডিওতে দেখা যায়, দুর্গম চর বা সাগর উপকূলে এই কনটেইনারটির মতো বেশ কিছুসংখ্যক কনটেইনার কাদাপানিতে পড়ে আছে। ভেসে যাওয়া কনটেইনারগুলো উদ্ধার না হলে কৃত্রিম ফুলের কনটেইনারটির মতো সব কটি কনটেইনারের পণ্য বেহাত হয়ে যেতে পারে।