টুইটারের লোগো পরিবর্তনের ঘোষণা আগেই দিয়েছিলেন ইলন মাস্ক। গত রোববারের সেই ঘোষণার পর গতকাল সোমবারই মাইক্রো ব্লগিং এই সাইটের ওয়েবসাইট থেকে উড়ে গেছে সেই বিখ্যাত নীল পাখির লোগো। তার পরিবর্তে কালো রঙের ওপর সাদা রঙে লেখা ‘এক্স’ অক্ষরটিকে ভেসে উঠতে দেখা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো শহরে টুইটারের সদর দপ্তরে সেই লোগো প্রক্ষেপণ করা হয়েছে গতকাল রাতেই।
ইলন মাস্কের বহুদিনের স্বপ্ন, এক অ্যাপেই সবকিছু পাওয়া যাবে, এমন একটি অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, গত অক্টোবরে যে ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ হাতে নেওয়ার পর কেবল ক্ষতিই হচ্ছে, সেই ব্যবসা নতুন করে ঢেলে সাজাতে যাওয়া ভালো ফল দেবে না। মাস্ক ৪৪ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে টুইটার কিনেছিলেন। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের।
এক্স লোগো উন্মোচনের পরই টুইটারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিইও লিন্ডা ইয়াকারিনো টুইট করেছেন এভাবে, ‘লাইটস। ক্যামেরা। এক্স।’ আর এমন করেই তিনি কোম্পানির নতুন পথচলাকে স্বাগত জানিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে টুইটারের এক সময়ের সবচেয়ে পরিচিত সম্পদ অর্থাৎ সেই নীল পাখির লোগোকে বিদায় জানান তিনি।
টুইটারের লোগো পরিবর্তন প্রক্রিয়া অবশ্য এখনো শেষ হয়নি। তবে ইয়াকারিনো বেশ কয়েকটি টুইটে এক্স শব্দটি উল্লেখ করে কোম্পানির উচ্চাশার কথা জানিয়েছেন। তিনি আশা করেন, এক্স শব্দটি তাদের কোম্পানিকে আরও বেশি করে জড়িয়ে ধরবে। এর আগে গত সপ্তাহান্তে ইলন মাস্ক কর্মীদের লেখা এক চিঠিতে বলেন, টুইটার থেকে পাঠানো এটাই তাঁর শেষ চিঠি। এমনকি ব্যবহারকারীদের তিনি এও বলেন, এখন থেকে কোনো পোস্ট আর টুইট নামে পরিচিত হবে না, বরং তা ‘এক্স’ নামে পরিচিত হোক।
এক্স শব্দটির প্রতি ইলন মাস্কের বিশেষ আকর্ষণ আছে। ফলে এই পরিবর্তনের পেছনে যে ইলন মাস্কই মূল অনুঘটক, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মাস্কের দ্বিতীয় স্টার্টআপ ছিল এক্স ডটকম, যা শেষমেশ পেপালে রূপান্তরিত হয়। মাস্কের আরেক কোম্পানির নাম স্পেসএক্স, টেসলার প্রথম গাড়ির মডেলের নামেও ছিল এক্স। এ ছাড়া সম্প্রতি এআইভিত্তিক স্টার্টআপের নামও দিয়েছেন এক্সএআই।
১৯৯৯ সালে এক্স ডটকম নামে একটি অব্যবহৃত ওয়েবসাইট কিনে রাখেন মাস্ক। ধারণা করা হচ্ছে, সেই ওয়েবসাইটও এবার পুনরুজ্জীবিত করতে পারেন তিনি। তবে সবাই এই পরিবর্তনের সঙ্গে একমত নন। বিজ্ঞাপন নির্বাহীদের অনেকে মনে করছেন, ব্যবহারকারীরা টুইটারের সঙ্গে থাকছেন কি না, সেটাই দেখার বিষয়।
লিন্ডা ইয়াকারিনো রোববার বিপণন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে কোম্পানির নতুন পরিবর্তনগুলো সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। ফিন্যান্সিয়াল টাইমস বলছে, সেখানে তিনি এক্সএআইয়ের সঙ্গে আরও বেশি করে সহযোগিতার কথা বলেছেন। তবে মাস্ক যেভাবে ব্যবহারকারীদের টুইট দেখার সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন, তাতে প্রশ্ন উঠেছে, প্রধান নির্বাহী হিসেবে ইয়াকারিনো কতটা স্বাধীন।
টুইটার এখন নানা ধরনের চ্যালেঞ্জর মুখে। কোম্পানির বিজ্ঞাপনী রাজস্ব ৫০ ভাগ কমে গেছে, আর্থিক প্রবাহ নেতিবাচক, সেই সঙ্গে মেটা থ্রেডস নামে নতুন এক মাইক্রো ব্লগিং সাইট নিয়ে এসেছে—এই বাস্তবতায় অর্থের বিনিময়ে টুইটার অ্যাকাউন্ট পরিচালনার যে নীতি মাস্ক গ্রহণ করেছেন, তা এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যথেষ্ট নয় বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
ইলন মাস্ক অনেক দিন ধরেই চীনের উইচ্যাটের মতো সুপার অ্যাপ বানানোর চেষ্টা করছেন, যে প্ল্যাটফর্মে অনলাইনে করা যায়, এমন সব কাজই করা যাবে। কিন্তু তৃতীয় পক্ষের তথ্য–উপাত্তে দেখা যায়, টুইটারের ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমছে। সুতরাং নতুন লোগো নিয়ে মাস্ক কতটা উড়তে পারবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।