গত ৫ বছরে দেশের পুঁজিবাজার থেকে প্রায় সোয়া ৬ লাখ বিনিয়োগকারী হারিয়ে গেছেন। সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের ৭ অক্টোবর পর্যন্ত পুঁজিবাজারে মোট বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাবের সংখ্যা ছিল ২২ লাখ ৯৬ হাজার ৩৭৩টি। তবে ২০২৪ সালের ৯ অক্টোবর এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৭৫ হাজার ৩১৯টিতে। এতে গত ৫ বছরে মোট ৬ লাখ ২১ হাজার ৫৪টি বিও হিসাব কমে গেছে, যা মোট বিনিয়োগকারীর ২৭ শতাংশ।
বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজার ত্যাগের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে বিনিয়োগের পর কাঙ্ক্ষিত মুনাফা না পাওয়া। বিশেষ করে গত কয়েক বছরে শেয়ারবাজারের ধারাবাহিক দরপতন, কারসাজি, গুজব, দুর্বল নজরদারি, এবং সুশাসনের অভাব বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট করেছে। তদুপরি দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে বিনিয়োগকারীরা আর্থিক নিরাপত্তা না পেয়ে পুঁজিবাজার থেকে সরে যাচ্ছেন। সিডিবিএলের তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ বছরে অনাবাসী বিনিয়োগকারীর বিও হিসাবও ব্যাপক হারে কমেছে। ২০২০ সালে অনাবাসী বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২৩ হাজার ৪৫৭টি, যা ২০২৪ সালে এসে ৪৬ হাজার ৯৬৫টিতে নেমে এসেছে। অর্থাৎ, এই সময়কালে ৬১.৯৫ শতাংশ অনাবাসী বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজার ত্যাগ করেছেন।
দেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও এই ধারা স্পষ্ট। ২০২০ সালের ৭ অক্টোবর দেশে মোট ২১ লাখ ৫৯ হাজার ৫০৪টি বিও হিসাব ছিল, যা এখন কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ১১ হাজার ২৯টিতে। এতে গত ৫ বছরে দেশি বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ২৫.৩৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। পুঁজিবাজার বিশ্লেষক এবং ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিকসের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মুসা বলেন, ‘বিও হিসাব কমে যাওয়া মানে বিনিয়োগকারীরা চলে যাওয়া। গত ৫ বছরে পুঁজিবাজারে যারা বিনিয়োগ করেছেন, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘অনাবাসী বিনিয়োগকারীদের জন্যও বাজার আকর্ষণীয় নয়। তাদের কাছে বিনিয়োগের বিকল্প অনেক বেশি। বাংলাদেশের বাজারের পাশাপাশি তারা অন্যান্য দেশের বাজারেও যেতে পারেন। হয়তো তারা সেটাই করছেন।’
বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ফ্লোর প্রাইসের কারণে প্রায় ২ বছর ধরে শেয়ার লেনদেন বাধাগ্রস্ত হয়েছে, ফলে বিনিয়োগ আটকে ছিল। এর বিপরীতে ফিক্সড ইনকাম সিকিউরিটিজে বিনিয়োগে ভালো মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে, তাই বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজার ছেড়ে অন্যান্য নিরাপদ খাতে যাচ্ছেন।
ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘পুঁজিবাজার দেশের অর্থনীতির প্রতিবিম্ব। সুদের হার বাড়লে বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজার থেকে সরে গিয়ে অন্যত্র বিনিয়োগ করেন।’