ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ২৫-৩০ শতাংশে পৌঁছে যাবে : আহসান এইচ মনসুরসাপ্তাহিক দর বৃদ্ধির শীর্ষে খান ব্রাদার্সদুই বিলিয়ন ডলারের নতুন সহায়তার প্রতিশ্রুতি বিশ্বব্যাংকের শেয়ারবাজারে দর পতনে বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ বাংলাদেশের শিল্প খাতের উন্নয়নে বিনিয়োগে আগ্রহী কাতার : শিল্পমন্ত্রী
No icon

বিশ্ববাজারে রকেটগতিতে সোনার দাম বৃদ্ধি দুই কারণে

বিশ্ববাজারে রকেটগতিতে বাড়ছে সোনার দাম। বিশেষত গত মার্চ মাস থেকে একের পর এক রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়ছে। গত শুক্রবার মূল্যবান এই ধাতুর দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রতি আউন্স ২৩৯১.৮৪ ডলার, যা এ যাবতকালের সর্বোচ্চ দাম। বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই কারণে বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়ছে। মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ উত্তেজনায় বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনার মজুদ বৃদ্ধি।

বাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং ইকোনমিকস জানায়, গত ২০ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববাজারে সোনার দাম ছিল ২০২৪ ডলার। গত ১৯ এপ্রিল এই দাম বেড়ে দাঁড়ায় ২৩৯১.৮৪ ডলার। এতে দেখা যায়, বিশ্ববাজারে দুই মাসে সোনার দাম বেড়েছে ৩৬৮ ডলার। এক মাসে মূল্যবান এই ধাতুর দাম বেড়েছে ৯.৪২ শতাংশ, আর এক বছরে বেড়েছে ১৯.৩৩ শতাংশ।

মধ্যপ্রাচ্যে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের মধ্যেই সম্প্রতি ইরান ইসরায়েলে হামলা করে। এর জবাবে ইসরায়েলও ইরানে হামলা করে। এতে তেলসমৃদ্ধ পুরো অঞ্চলেই যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেল ও গ্যাস সরবরাহে যেমন বিঘ্ন ঘটবে, তেমনি অর্থনীতিতে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হবে। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এ ব্যাপারে সতর্ক করে বলেছে, ইরান-ইসরায়েল হামলা-পাল্টাহামলা ও উত্তেজনার কারণে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যদি এমনটি হয়ে থাকে, তবে জ্বালানি তেলের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেবে এবং বিশ্ব আরেকটি অর্থনৈতিক সংকট দেখবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন শঙ্কার কারণেই বিশ্বজুড়ে নিরাপদ বিনিয়োগখ্যাত সোনার দাম দ্রুতগতিতে বাড়ছে। এর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনা ক্রয়ও এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে।

ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারি মাসে বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সোনার রিজার্ভ বাড়িয়েছে ১৯ টন। এর ফলে টানা নবম মাস সোনার রিজার্ভ বাড়ল। যদিও গত জানুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনা ক্রয় ছিল ৪৫ টন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কিনেছে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পিপলস ব্যাংক অব চায়না গত ফেব্রুয়ারি মাসে তাদের সোনার রিজার্ভ ১২ টন বাড়িয়ে করেছে দুই হাজার ২৫৭ টন।  ২০২৩ সালে ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বিশ্বের ২৪ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্রমবর্ধমান মার্কিন ডলারের রিজার্ভ নিয়ে হতাশায় রয়েছে। এ কারণে এক বছরের মধ্যে সোনার রিজার্ভ বাড়াতে চায়। এর ফলে এ বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতো আনুষ্ঠানিক খাত থেকেই সোনার জন্য উচ্চ চাহিদা থাকবে।

জেপি মরগানের বিশ্লেষকরা বলছেন, আশা করা যায় যুক্তরাষ্ট্র সুদহার কমাবে। এতে ডলার দুর্বল হবে এবং সোনার দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। এমনকি ২০২৫ সালে মূল্যবান এই ধাতুর দাম সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শুধু সোনার দাম বাড়ছে না, তার সঙ্গে রুপার মতো ধাতুর দামও বাড়ছে। সে কারণে তাঁরা মনে করছেন, এবার স্বর্ণের মূল্যবৃদ্ধির ধারা টেকসই হবে।

যেকোনো পণ্যের দাম ওঠানামা নির্ভর করে চাহিদা ও জোগানের ওপর। তবে সোনার ক্ষেত্রে যোগ হয় ভোক্তার আচরণ। কেউ যদি মনে করেন সামনে মূল্যস্ফীতি বাড়বে, তাহলে অর্থের ওপর ভরসা কমে যায়, কারণ মূল্যস্ফীতি বাড়লে অর্থের মূল্যমান হ্রাস পায়। তখন মনে করা হয়, এমন কিছু পণ্য কিনে রাখতে হবে, যার ক্ষয় নেই।